শাস্ত্র প্রমাণ: সর্বাধিক প্রামাণিক প্রমাণ
- Swami Yugal Sharan Ji

- Apr 10
- 2 min read
Updated: Apr 16

ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক কোনও নতুন বিষয় নয়। এটি একটি প্রাচীন প্রসঙ্গ, যেখানে আস্তিক ও নাস্তিক উভয়ই যুক্তির আশ্রয় নেন। ভারতীয় দর্শনে ‘প্রমাণ’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব রয়েছে। কোনও মতবাদকে প্রমাণ করতে বা খণ্ডন করতে হলে যুক্তিকে যথাযথ প্রমাণের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হয়। প্রধান তিনটি প্রমাণ হল: প্রত্যক্ষ প্রমাণ, অনুমান প্রমাণ ও শব্দ প্রমাণ।
১) প্রত্যক্ষ প্রমাণ (Pratyaksha Pramana):
নাস্তিকদের যুক্তি মূলত প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর ভিত্তি করে, যার প্রচার করেছিলেন চার্বাক ঋষি। প্রত্যক্ষ অর্থাৎ পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান, বিশেষত চোখের দ্বারা দেখা দৃশ্য। “Seeing is believing” — অর্থাৎ “যা দেখা যায়, তাই সত্য” — এটি নাস্তিকদের প্রিয় উক্তি, তবে এর স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
যেমন:
আমরা প্রতিদিন দেখি সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে পৃথিবী ঘোরে, সূর্য নয়।
দিনে আকাশে তারা দেখা যায় না, তাই বলে কি তারা নেই?
যদি আঙুল পানিতে ডুবিয়ে দেখি, তাহলে তা ছোট মনে হয়, অথচ তা আদৌ ছোট হয় না।
এই উদাহরণগুলি প্রমাণ করে যে প্রত্যক্ষ জ্ঞান সীমিত এবং একে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য ধরা যায় না। এজন্যই বিজ্ঞানের গবেষণা সময়ে সময়ে পুরনো তত্ত্বকে খণ্ডন করে। যেমন কান জিভের স্বাদ টের পায় না, তেমনি ভৌতিক ইন্দ্রিয় ঈশ্বরের divya (দিব্য) রূপ অনুভব করতে অক্ষম।
২) অনুমান প্রমাণ (Anumana Pramana):
আমরা একটি ঘটনা দেখে আরেকটির অনুমান করি। যেমন পাহাড়ে ধোঁয়া দেখলে আমরা অনুমান করি সেখানে আগুন লেগেছে। তেমনি এই ব্রহ্মাণ্ডের সুবিন্যস্ত সৃষ্টি, সৌরজগৎ, গ্যালাক্সি — এগুলো বোঝায় যে এক মহান নিয়ন্তা আছেন যিনি সব কিছু পরিচালনা করেন।
তবে সব অনুমানই কেবল অনুমান — সম্পূর্ণ সত্য নয়। যেমন অন্ধদের একটি দল হাতিকে স্পর্শ করে বোঝার চেষ্টা করলে — কেউ বলবে দেওয়াল, কেউ বলবে দড়ি, কেউ বলবে স্তম্ভ। কেউ ভুল বলবে না, কিন্তু কেউ পূর্ণ সত্য বলতেও পারবে না।
৩) শব্দ প্রমাণ (Shabda Pramana):
আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রমাণ হলো — শব্দ প্রমাণ, অর্থাৎ শাস্ত্র। বিশেষত বেদ, যেগুলি ঈশ্বর স্বয়ং প্রকাশ করেছেন — এগুলোই সর্বাধিক প্রামাণিক। প্রত্যক্ষ ও অনুমান — এই দুটি শব্দ প্রমাণের সহায়ক মাত্র। এগুলো ভৌতিক জগৎ বোঝাতে সাহায্য করে, কিন্তু দিব্য ঈশ্বরকে বুঝতে অক্ষম।
যে প্রমাণ মানুষের বুদ্ধি থেকে আসে বা ভবিষ্যতে আসবে, সেটিও ভৌতিকই হবে। তাই ভৌতিক প্রমাণ দিয়ে ঈশ্বরকে জানা যায় না।
পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বেদে আগ্রহ:
বিশ শতকের শুরুতে বহু পাশ্চাত্য দার্শনিক বেদ নিয়ে গভীর গবেষণা করেন। জার্মান ইন্ডোলজিস্ট পল জ্যাকব ড্যুসেন, যিনি স্বামী বিবেকানন্দের সমসাময়িক ছিলেন, তিনি লিখেছিলেন —“বেদ ব্রহ্ম–আত্মাকে একটি অনুভবযোগ্য সত্য হিসেবে বর্ণনা করে, কোনো সংজ্ঞায় নয়।”একজন অন্য জার্মান দার্শনিক, আর্থার শোপেনহাওয়ার বলেন —“উপনিষদ অধ্যয়ন আমার জীবনের সবচেয়ে উপকারী ও আত্মোন্নতিকর কাজ ছিল। এটি আমার জীবনের শান্তি এবং মৃত্যুর সময়েও আমার আশ্রয় হবে।”
উপসংহার:
ঈশ্বরকে বুদ্ধি, যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় না — কেবল প্রেম ও শ্রদ্ধার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়।নাস্তিকেরা যুক্তির মাধ্যমে তাদের মত প্রমাণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই ঈশ্বরের অস্তিত্ব খণ্ডন করার একটি দৃঢ় প্রমাণও দিতে পারেননি।
রাধে রাধে



Comments