সম্পর্কিত ব্যক্তির প্রকৃত অর্থ
- Swami Yugal Sharan Ji

- Apr 10
- 2 min read
Updated: Apr 16

আমাদের জীবন সম্পর্কের এক অনন্য যাত্রা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা অবিরত সম্পর্ক গড়ে তুলি ও ভেঙে ফেলি। কিন্তু এই জীবনের আসল অনুসন্ধান সেই সত্যিকারের আত্মীয়ের জন্য — যিনি সত্যিই আমাদের, যিনি নিঃস্বার্থভাবে আমাদের ভালবাসেন, আমাদের পাশে থাকেন, কখনো আমাদের ত্যাগ করেন না এবং চিরকাল আমাদের হয়ে থাকেন।
সম্পর্কের অর্থ কী? শাস্ত্রমতে, "সম্পর্ক" মানে হলো – নিঃস্বার্থ ও চিরস্থায়ী সংযোগ। যদি আমরা আমাদের গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোর মূল্যায়ন করি, তবে দেখতে পাবো তারা এই মানদণ্ডে পুরোপুরি খাঁটি নয়।
তাহলে আমরা সম্পর্ক গড়ে তুলি কেন? কারণ আমরা নিঃস্বার্থ প্রেম, সহানুভূতি ও যত্নের সন্ধানে থাকি। প্রকৃতপক্ষে, আমরা ঐশ্বরিক প্রেমের অনুসন্ধানে আছি। কিন্তু এই পার্থিব জগতে কি এমন কেউ আছেন যিনি আমাদের সত্যিকারের নিঃস্বার্থ প্রেম দিতে পারেন?
যদি গভীরভাবে ভাবি, তবে দেখা যাবে এই জগতে প্রতিটি মানুষই নিঃস্বার্থ প্রেমের জন্য তৃষ্ণার্ত। একজন ব্যক্তি, যিনি নিজেই প্রেমের জন্য কাতর, আরেকজন প্রেম-তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। কিন্তু দুজনেই নিঃস্বার্থ হতে পারেন না, কারণ যতক্ষণ না কেউ ঈশ্বরীয় প্রেমে অভিষিক্ত হন, ততক্ষণ তিনি সত্যিকারে নিঃস্বার্থ হতে পারেন না। এটা অনেকটা যেন এক ভিক্ষুক আরেক ভিক্ষুকের কাছে কিছু চাইছে।
ঈশ্বরীয় প্রেম কীভাবে লাভ করা যায়? কেবলমাত্র ভগবানকে জানার মাধ্যমে এবং একজন সত্যিকারের গুরুজির চরণে পরিপূর্ণ শরণাগত হয়ে তবেই ঐশ্বরিক প্রেম লাভ করা সম্ভব।
তবুও এত অগণিত জন্ম নিয়ে আমরা কেন এখনো সংশোধিত হইনি? কারণ আমাদের পার্থিব আসক্তি আমাদের বেঁধে রেখেছে — নাম, যশ, পদ, সম্মান ইত্যাদির মূর্খতাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলি আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করেছে।
আমরা একটি সুন্দর জীবন যাপন করতে পারতাম, কিন্তু আমরা মা, পিতা, দোকান, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ইত্যাদির সঙ্গে এত গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছি যে এই আসক্তি আমাদের দেহ, মন ও বুদ্ধিকে গ্রাস করেছে এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্রকে অব্যাহত রেখেছে।
আমরা আমাদের অমূল্য সময় ও শক্তিকে এই সম্পর্কগুলো গড়ে তোলা ও রক্ষা করতেই ব্যয় করি, এবং যখন সেগুলি ভেঙে যায়, তখন আমরা দুঃখ, শূন্যতা এবং মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হই।
এই পার্থিব জগতের বাস্তবতা কী? গাছে ফল ধরলে, পাখিরা না ডাকলেই আসে; কিন্তু ফল শেষ হলে ওরা উড়ে যায়। তেমনি, যখন আমাদের কাছে ধন-সম্পদ, স্বাস্থ্য ও সম্মান থাকে, তখন ছেলে-মেয়ে, ডাক্তার, নেতা — সবাই আমাদের চারপাশে থাকে।
কিন্তু যেই মুহূর্তে এগুলো চলে যায়, কেউ আর থাকে না। ফুল শুকিয়ে গেলে মৌমাছি আসে না। পুকুর শুকিয়ে গেলে রাজহাঁস আর বাসা বাঁধে না। তেমনই, যখন একজন মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, তখন তার নিজের লোকেরাও তাকে ছেড়ে চলে যায়।
একবার আমি হরিদ্বারে এক আধ্যাত্মিক সফরে ছিলাম। আমার সামনের আসনে আমাদের দেশের এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন আঞ্চলিক দলের নেতা বসেছিলেন। তারা যখন স্টেশনে নামলেন, তখন না ছিল কোনো জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা, না মালা – কেবল শুকনো ফুলের একটা ছোট গুচ্ছ, যা এক রকমে ফাঁসির দড়ির মতোই মনে হচ্ছিল। লোকেরা তাদের নামে স্লোগান দিতেও আগ্রহী ছিল না, বরং আঞ্চলিক নেতাকে জোর করে লোকদের দিয়ে স্লোগান দিতে হলো। এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়, বরং এই জগতের নির্মম বাস্তবতা। যতক্ষণ না মানুষের স্বার্থ পূরণ হয়, ততক্ষণ তারা আমাদের সঙ্গে থাকে।
বেদের ঘোষণা হল:
"নৈব স্ত্রী, ন পত্যুঃ, ন পুত্রঃ, ন মাতা, ন বন্ধুঃ আত্মার্থং প্রিয়ং ভজতে।"
কোনো সম্পর্ক – স্বামী, স্ত্রী, পিতা, পুত্র ইত্যাদি – আসলে আমাদের জন্য নয়, বরং নিজেদের স্বার্থের জন্য আমাদের ভালোবাসে।
শুধুমাত্র ভগবান এবং সত্যিকারের সাধুসন্তরাই চিরকাল আমাদের সঙ্গে থাকেন। তারাই আমাদের প্রকৃত আত্মীয়। যারা আমাদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, আমাদের সদা সহায়তা করেন, আমাদের কখনো ছাড়েন না – কেবল তারাই আমাদের সত্যিকারের আপন।
রাধে রাধে



Comments